ArabicBengaliEnglishHindi
scriptForHost

অপরহণ, মারপিট ও মাথা ন্যাড়া করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে


প্রকাশের সময় : জুন ১৪, ২০২২, ১২:৪৭ অপরাহ্ন / ৪১
অপরহণ, মারপিট ও মাথা ন্যাড়া করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

তালা প্রতিনিধি ->>
কলেজপড়ুয়া এক ছাত্রকে অপরহণ করে মারপিট ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে, দাবি করা হয়েছে মুক্তিপণ। টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা নির্যাতনের একপর্যায়ে ওই ছাত্রের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলা । এ ঘটনায় থানায় মামলা দিয়ে এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছে বলে জানিয়েছে ওই ছাত্রের পরিবার।

নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময় (২০) তালা সদরের জাতপুর গ্রামের শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। তিনি চলতি বছর জাতপুর টেকনিক্যাল কলেজ থেকে এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য খুলনায় কোচিং করছেন।

তাঁকে নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় পাঁচ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিব, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী, ছাত্রলীগ কর্মী জে আর সুমন, জয় ও নাহিদ হাসান। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও সাত-আটজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী কলেজছাত্র তন্ময়ের বাবা আজিজুর রহমান বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে আসামিদের কোনো বিরোধ নেই, একসঙ্গে পড়েনও না। হঠাৎ গতকাল রোববার বেলা একটার দিকে পূর্বপরিচিত নাহিদ হাসান মুঠোফোনে তন্ময়কে ডেকে নিয়ে যান তালা সরকারি কলেজের সামনে। সেখান থেকে নিওয়া যাওয়া হয় কলেজের একটি কক্ষে। সেখানে নিয়ে তন্ময়কে মারপিট করা হয়। মাথা ন্যাড়া করে এবং উলঙ্গ করে ভিডিও ধারণ করা হয়।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘তারপর আমার স্ত্রীর কাছে ফোন করে ছেলেকে ফিরে পেতে দুই লাখ টাকা নিয়ে কলেজের সামনে যেতে বলা হয়। ও প্রান্ত থেকে ছেলেকে মারপিটের চিৎকার শোনাচ্ছিল তারা। একপর্যায়ে আমার ছেলের একটি ম্যাসেজের মাধ্যমে জানতে পেরে আমার ভাইপো ও কয়েকজন আত্মীয় ওই কলেজ থেকে তাকে উদ্ধার করে। আমার ছেলের জীবনটা নষ্ট করে দিল।

আজিজুর রহমান জানান, গতকাল সন্ধ্যার দিকে ছেলেকে উদ্ধার করার পর তালা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাতে থানার মধ্যেই হুমকি দিতে থাকেন ঘটনার সঙ্গে জড়িত পক্ষের লোকজন। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি ধারণা করছি, আমার ছেলের নতুন মোটরসাইকেলটি তারা নিয়ে নিতে চেয়েছিল। সে কারণেই এ কাণ্ড ঘটিয়েছে। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্র তন্ময় বলেন, নাহিদ হাসান তাঁর পূর্বপরিচিত। তালা বাজারে যাতায়াতের সুবাদে পরিচয়। তাঁকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আকস্মিকভাবে মারপিট শুরু করেন আকিবসহ অন্যরা। কলেজের পশ্চিম পাশে একটি কক্ষের মধ্যে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন চালান। হাতে, পায়ে নির্মমভাবে মারপিট করে মাথা ন্যাড়া করে দেন। এরপর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। তারপর বাড়িতে ফোন দিয়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন তাঁরা। এঁরা সবাই ছাত্রলীগের নেতা–কর্মী।

তালা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ হুমায়ূন কবীর জানান, এ ধরনের কোনো খবর তাঁর জানা নেই। ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা কলেজে টর্চার সেল করেছেন, এটিও তাঁর জানা নেই।

তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিব বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়নি। তন্ময় আমার এক চাচাতো বোনকে ‘থ্রেট’ করেছে। এ জন্য রাগের মাথায় তাঁকে মারপিট করা হয়েছে। তবে তাঁর মায়ের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ার কথা ঠিক নয়।

তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন রায় বলেন, তিনি শুনেছেন এক ছাত্রকে মারপিট করা হয়েছে। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন। সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এ আশিকুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের কোনো নেতা–কর্মী এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছেন তালা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম। তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।